December 21, 2024, 11:19 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়অ শহরে যত্রতত্র বরফ ও লবণ মিশ্রিত লেবু অথবা ইস্পি (এক ধরনের ইনস্ট্যান্ট পাউডার) পানি বিক্রয় হচ্ছে। মানুষ সেগুলো পান করছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই জিনিসের ক্রেতা রিকশাচালক, দিনমজুর, দোকানদার, পথচারী অনেক সচেতন মানুষকেও দেখা গেছে রাস্তার পাশের এসব শরবত পান করতে। এসব স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করলেও কোন তদারকি নেই।
শহরের চার রাস্তামোড়, পাঁচরাস্তা মোড়, মজমপুর গেইটসহ বড় বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০/১৫টি স্থানের বাইরেও অলিগলিতে এবং পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য শরবতের দোকান। যার অধিকাংশই ভ্রাম্যমাণ। ছোট ভ্যানের ওপর একটি ফিলটার, লেবু, কয়েকটি গ্লাস, পানি, বিভিন্ন কোম্পানির ইনস্ট্যান্ট পাউডারের ছোট প্যাকেট দিয়েই দোকানের পসরা সাজানো হয়েছে। শরবত তৈরিতে মানা হচ্ছে না কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি। সংশ্লিষ্টরা ফিল্টারের ওপরে ঢাকনা খুলে খালি হাতেই বরফ-পানি, লেবু দিয়ে শরবত নাড়া দিচ্ছেন আবার ওই হাতেই টাকা নিচ্ছেন কিংবা অন্যান্য কাজও করছেন। যে গ্লাসে শরবত পরিবেশন করা হচ্ছে সেটি একজন পান করার পরে পাশের ছোট বালতির সাদা পানিতে ধুয়েই আবার আরেকজনকে শরবত পান করার জন্য দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া শরবত ঠান্ডা করতে যে বরফ দেওয়া হচ্ছে সেটিও আনা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে। খালি রিকশায় কিংবা ভ্যানে ছালার চট বিছিয়ে আনা এসব বরফ কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সে প্রশ্নের উত্তরও জানা নেই কারো। আর শরবত তৈরির জন্য যে পানি ব্যবহার করা হচ্ছে সেসব পানি দোকানিরা যার যার সুবিধা অনুযায়ী রাস্তার পাশ থেকে কোন টিউবওয়েল থেকে সংগ্রহ করছেন।
এর বাইরেও, কোথাও বেলের শরবত বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বেল আগে থেকেই ভেঙে খোলা অবস্থায় রাখা হয়েছে। ধুলোবালি পড়ে থাকা সেই বেলই কিছুসময় পর আবার শরবতে দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন রাস্তার পাশের এসব ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে যে বরফ ব্যবহার করা হচ্ছে তার অধিকাংশই মানুষের খাবার উপযোগী নয়। বিভিন্ন বরফকল থেকে মাছ সংরক্ষণ করার জন্য তৈরি করা বরফের পাটালি পাইকারি দামে কিনে এনে শরবতে মেশান বিক্রেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শরবত বিক্রেতা জানান, বরফকলে সাধারণত দুই ধরনের বরফ তৈরি করা হয়। একটি মাছ সংরক্ষণের জন্য। আরেকটি খাবার জন্য। এর মধ্যে মাছ সংরক্ষণের জন্য যে বরফ তৈরি করা হয় সেটির দাম তুলনামূলক কম। সেজন্য মাছ সংরক্ষণের জন্য তৈরি বড় বরফই কেনেন তারা। এক্ষেত্রে পাশাপাশি কয়েকটি দোকানের বিক্রেতারা একসাথে কিছুসময় পরপর একটি বা দুটি করে বরফের পাটালি কিনে নিয়ে আসেন। যা ভাগ করে ব্যবহার করা হয়।
কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটি বাজারের মাছের বরফ তৈরি এমন একটি বরফ কলের এক কর্মচারীর সাথে কথা হয়। তিনি নাম প্রকাশ করতে রাজি না হয়ে জানান, মানুষ এসে বরফ কিনে নিয়ে যায়। কে কোন কারনে কিনছে তা জানা যায় না। তবে তার সন্দেহ হয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন শহরের মধ্যে লেবু পানি বিক্রি করে এমন অনেকেই বরফ কিনছে বলে তার মনে হয়।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, বর্তমান এই তাপপ্রবাহের সময়ে স্বাভাবিক ও নিরাপদ খাবার পানির বিকল্প নেই। গরমে অতিরিক্ত ঠান্ডা, বফর পানি কিংবা অনিরাপদ পানি পান করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। বাইরের কৃত্রিম ফ্লেভার যুক্ত শরবত থেকে দূরত্ব রাখার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
Leave a Reply